৯ ১ ৯
ভীষন রাগে, কন্ঠরুদ্ধ শোকে বা ভাবলেশহীন নির্লিপ্ততায়
যেভাবেই দেখি না কেন গত তিন বছরে ২৮টি বন্ধ কারখানায়
শ্রমিকের মৃত্যুসংখ্যা ৯১৯ যার মধ্যে ৪১টি আত্মহত্যা/অত্মহত্যা
মহাপাপ- এই সব কথাগুলো এবার বাতিল করতে হবে বোধহয়
কারণ এমন কোন ভরসা নেই যাতে করে আমি এই
ছাব্বিশে বৈশাখ বুক ফুলিয়ে বলতে পারি যে ৯১৯ কে ৯২০
হতে দেব না, হয়তো হয়েই গেছে বা ৪২ নম্বর আত্মহত্যার সময়
ইলেট্রিক ট্রেন বা আটকাতে পারব না আরও একটি কারখানা
বন্ধ হয়ে যাওয়া
এত অপমান বহন করে বাঁচতে হয়
এত ছোট, এত অকিঞ্চতকর হয়ে বাঁচার ভান করতে হয়
এত হারতে হয়, হারতে হয়
কাল ছিল পঁচিশে বৈশাখ/ভোটের বাজার বলেই এবার অলিতে গলিতে রাস্তায়
কলতলায় দেদার রবীন্দ্রপ্রেমী গুছিয়ে নেমেছিল, যাই হোক কোথায় যেন স্পিকারে
গমগম করে চলছিল ক্যাসেট ঃ আমার জীর্ণ পাতা যাবার বেলায় ডাক দিয়ে
যায় বারে বারে বারে/ অকষ্মৎ ধ্বংসের এক স্মৃতি মনে পড়ে গেল- ইন্দোনেশিয়ায়
১৯৬৫-র সেই কমিউনিস্ট-কোতলে, মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত এক কমিউনিস্ট নেতা
ওই গান গেয়ে উঠেছিলেন- ডাক দিয়ে যায় বারে বারে
নতুন পাতার দ্বারে দ্বারে
হঠাৎ মনে পড়ে গেল ১৯৭১, ১৯৪৯, ১৯৫৮, ১৯৭০ কয়েকটা ম্যাজিক
সংখ্যা যাই হোক ৯১৯ দের কথা এখন কে ভাববে যখন গান্ধিবাদ, বিষাক্ত
পদ্মফুল বা বিষাক্ত মার্কবাদী নেতার একমাত্র আশ্রয় হেলিকপ্টার/যখন কোটি
কোটি টাকায় ফ্লুরোসেন্ট লেখায় সিটি অফ জয় ছয়লাপ/যখন নানাবিধ
বিশেষণে, স্বর্গীয় অলৌকিক জ্যোতিতে, সিদ্ধার্থেও বুদ্ধবাণীতে আকাশবাতাস
মশগুল/যখন ফিল্মস্টার থেকে ক্রিকেটার থেকে বডিবিল্ডার থেকে মাফিয়া
লিডার সবাই দেশকে বাঁচাতে উদগ্রীব/এত দেশপ্রেমিক প্যাট্রিয়ট মিসাইল উড়ছে
যে চাঁদ তারা কিছুই দেখা যাচ্ছে না
মেট্রোরেল থেকে পেট্রোডলার
টালাট্যাঙ্ক থেকে সুইস ব্যাঙ্ক
-এক জব্বর হিসেব
অপারগ হতে পারি কিন্তু অকৃতজ্ঞ নই
ভীতু, ধুড় হতে পারি কিন্তু সত্যি কথা মিনমিন করে
হলেও বলব
এই সংসদীয় ধনতন্ত্রে তিলমাত্র বিশ্বাস করি না
বিশ্বাস করি মানবিকতায়, সহমর্মিতায়, গণতন্ত্রে
যা অসম্পূর্ণ হলেও অনাহারে মৃত্যু বা আত্মহত্যা
অন্তত ঠেকাতে পারে
একটা কাঁধের পাশে আরেকটা কাঁধ এনে একটা
বাঁধ বাঁধতে পারে মৃত্যু, হতাশা ও দুঃস্বপ্নের বিরুদ্ধে
অন্তত এইটুকু হোক
আপাতত এইটুকু কিভাবে করা যায়
পরের কথা দেখা যাবে পরে
বসন্তে নতুন পাতা আসে, শীতে পাতা ঝরে
(ম্যানিফেস্টো, ফেব্রুয়ারি-জুন ১৯৯১)