বিখ্যাত কবিদের কবিতা

চিঠি

বিনু!
তোমায় আমায় ফুল পাতিয়েছিনু,
মনে কি তা পড়ে? –
যেদিন সাঁঝে নতুন দেখা বোশেখ মাসের ঝড়ে
​​ ​​ ​​​​ আমবাগানের একটি গাছের তলায়
দুইটি প্রাণই দুলেছিল হিন্দোলেরই দোলায়?
​​ ​​ ​​​​ তুমি তখন পা দিয়েছ তরুণ কৈশোরে!
​​ ​​ ​​​​ দোয়েল-কোয়েল-ঘায়েল-করা করুণ ওই স্বরে
​​ ​​ ​​​​ জিজ্ঞাসিলে আবছায়াতে আমায় দেখে – ‘কে?’
​​ ​​ ​​​​ সে স্বরে মোর অশ্রুজল চক্ষু ছেপে যে!
বলতে গিয়ে কাঁপল আমার আওয়াজ, – ‘বিনু,​​ আমি!’
চমকে তুমি লাল করে গাল পথেই গেলে থামি।
​​ ​​ ​​​​ আঁখির ঘন কালো পল্লবে
চটুল তোমার চাউনি চোখের হঠাৎ নিবল যে!
​​ ​​ ​​​​ পানের পিকে-রাঙা হিঙুল বরন
​​ ​​ ​​​​ আকুল অধর আলতা-রাঙা চরণ,
শিউরে শিউরে উঠল কেঁপে অভিমানের ব্যথায়,
বরষ পরে এমন করে আজ যে দেখা হেথায়!
​​ ​​ ​​​​ নলিন-নয়ান হয়ে মলিন সজল
​​ ​​ ​​​​ মুছলে তোমার চোখের কালো কাজল!
​​​​
​​​​ * ​​ ​​ ​​ ​​​​ * ​​ ​​ ​​ ​​​​ *
​​​​
তারপর ঘেরে ঝড়ঝঞ্ঝা বৃষ্টি করকায়
অভিমান আর সংকোচেরই নিদয় ‘বোরকা’য়
উড়িয়ে দিল;​​ কেউ জানিনি কখন দুজনে
অনেক আগের মতোই আবার আকুল কূজনে
​​ ​​ ​​​​ উঠেছিনু মেতে!
তারপর হায়,​​ ফিরে এনু আবার ঘরে রেতে,
আম বাগানের পাশের খেতে বদল করে মালা, –
​​ ​​ ​​​​ ফের বিদায়ের পালা!
দুজনারই শুধু ফুলের মালার চুম্বনে
ছাড়াছাড়ি হল কেয়ার সেই নিঝুম বনে।
​​​​
হয়নি তো আর দেখা,
​​ ​​ ​​​​ আজও আশায় বসেই আছি একা
সেই মালাটির শুকনো ফুলের বুকনোগুলি ধরে
​​ ​​ ​​​​ আমার বুকের পরে।
​​​​
এ তিন বরষ বিনা কাজের সেবায় খেটে যে
কেউ জানে না,​​ বিনু,​​ আমার কেমন কেটেছে!
আজও তেমনি কান্না-ধোয়া সজল যে জ্যোৎস্না,
​​ ​​ ​​​​ তেমনি ফুটেছে হেনা-হাসনা, –
তুমিই শুধু নাই!
সিন্ধুপারের মৌন-সজল ইন্দুকিরণ তাই
​​ ​​ ​​​​ তোমার চলে যাওয়ার দেশে যেতে
অভিসারের গোপন কথা এনেছে এ রেতে!
সেবার এবার শেষ হয়েছে,​​ আজ যে কাজের ছুটি,
তাইতে,​​ বিনু,​​ হেসে কেঁদে খাচ্ছি লুটোপুটি!
অচিন দেশে আগের স্মৃতি নাই বা যদি জাগে,
​​ ​​ ​​​​ তাইতো বিনু চিঠি দিনু আগে।
​​ ​​ ​​​​ এখন শুধু একটি কথা প্রিয়,
বিচ্ছেদেরও বেদন দিয়ো – বুকেও তুলে নিয়ো।
ব্যথায়-ভরা ছাড়াছাড়ি মিলন হবে নিতি,
​​ ​​ ​​​​ সেথায় মোদের এমনি করে,​​ প্রিয়তম! – ইতি।

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

এটাও দেখুন
Close
Back to top button