বিখ্যাত কবিদের কবিতা

পূজা অভিনয়

মানুষের পদ-পূত মাটি দিয়া
​​ ​​​​ দেবতা রচিছে পূজারিদল।
সে দেবতা গেল স্বর্গে,​​ মানুষ
​​ ​​​​ রহিল আঁকড়ি মর্ত্যতল।
দেবতারে যারা করেছে সৃজন,
​​ ​​​​ সৃজিতে পারে না আপনারে,
আসে না শক্তি,​​ পায় না আশিস,
​​ ​​​​ ব্যর্থ সে পূজা বারে বারে।
মাটির প্রতিমা মাটিই রহিল,
​​ ​​​​ হায় কারে দিবে শক্তিবর,
দেবতার বর নিতে পারে হাতে
​​ ​​​​ হেথা কোথা সেই শক্তিধর!
বিগ্রহ-চালে হাসে বুড়োশিব,
​​ ​​​​ বলে, ‘দেখো দেখো দশভুজা,
নেংটি পরিয়া নেংটে ইঁদুর –
​​ ​​​​ ভক্তরা এল দিতে পূজা;
গণেশ-ভক্ত ইঁদুরে-বুদ্ধি
​​ ​​​​ হস্তীকর্ণ লম্বোদর,
কার্তিকে মোর সাজায়েছে দেখো,
​​ ​​​​ যেন উহাদের মিয়ের বর!
উহাদের দেব-সেনাপতি পরে
​​ ​​​​ ছেঁড়া কটিবাস আধ-হাতি,
সেনাদল হল চরকাবুড়ি গো,
​​ ​​​​ তরুণেরা হল জোলা তাঁতি!
মাথা কেটে আর অস্ত্র হেনেও
​​ ​​​​ হয় না স্বাধীন আর সকল,
সূতা কেটে আর বস্ত্র বুনিয়া
​​ ​​​​ কেল্লা করিবে ওরা দখল!
বলি দেয় ওরা কুমড়ো ছাগল
​​ ​​​​ বড়ো জোর দুটো পোষা মহিষ,
মহিষাসুরেরে বলি দিতে নারে,
​​ ​​​​ বলে, ‘মাগো ওটা তুই বধিস।’
লক্ষ্মীর হাতে অমৃতভাণ্ড,
​​ ​​​​ লক্ষ্মী ছেলেরা তাহাই চায়,
তাই পূজা করে ওরা বণিকেরে –
​​ ​​​​ লক্ষ্মীবাহন কালপ্যাঁচায়!
অমৃত চাহিছে,​​ ওরা তো চাহে না
​​ ​​​​ মোর কণ্ঠের বিষের ভাগ,
ওদেরই মরুতে জঙ্গলে চরে
​​ ​​​​ তোমার বাহন সিংহ-বাঘ!
দেখিয়া তরাসে পলায় উহারা;
​​ ​​​​ বাহন দেখিয়া যাদের ভয়,
সিংহবাহিনী! পূজিয়া তোমায়
​​ ​​​​ তারাই করিবে অসুর জয়?
সেথা তব হাতে টিনের খড়গ,
​​ ​​​​ সারা গায়ে মোড়া ঝালতা রাং,
দেখে হাসে আর ঘুমাই শ্মশানে,
​​ ​​​​ ভক্তের দল জোগায় ভাং।
কোন রূপ তব ধ্যান করে ওরা,
​​ ​​​​ শুনিবে?​​ শুনিয়া যাও ঘুমোও,
শ্বশুর-বাড়ির ফেরত যেন গো,
​​ ​​​​ অসুর-বাড়ির ফেরত নও!
বাণী-মেয়ে মোর বোবা হয়ে বসে,
​​ ​​​​ ভাঙা বীণা কোলে বসিয়া রয়,
কথায় কথায় সেথা সিডিসন,
​​ ​​​​ কী জানি কখন জেলের ভয়।
নিজেরা বন্দি,​​ তাই দেখো ওরা
​​ ​​​​ ধরিয়া ও কোন কন্যারে
কলা-বউ করে রেখেছে তাদের
​​ ​​​​ হীন কামনার কারাগারে!
ভূতো ছেলেগুলো কলেজেতে পড়ে,
​​ ​​​​ কে জানে ক-ল্যাজ পায় হোথায়,
কেহ শাখামৃগ হইয়াছে উঠি
​​ ​​​​ আধ্যাত্মিক উঁচু শাখায়!’
​​​​
এমনই শরৎ সৌরাশ্বিনে
​​ ​​​​ অকাল-বোধনে মহামায়ার
যে পূজা করিল বধিতে রাবণে
​​ ​​​​ ত্রেতায় স্বয়ং রামাবতার,
আজিও আমরা সে দেবী-পূজার
​​ ​​​​ অভিনয় করে চলিয়াছি!
লঙ্কা-সায়রী রাবণ ধরিয়া
​​ ​​​​ টুঁটিতে ফাঁসায়ে দেয় কাছি।
দুঃসাহসীরা দুর্গা বলিয়া
​​ ​​​​ হয়তো কাছিতে পড়ে ঝুলে,
দেবীর আসন তেমনই অটল,
​​ ​​​​ হয়তো ঈষৎ ওঠে দুলে।
কে ঘুচাবে এই পূজা-অভিনয়,
​​ ​​​​ কোথায় দূর্বাদলশ্যাম
ধরণি-কন্যা শস্য-সীতারে
​​ ​​​​ উদ্ধারিবে যে নবীন রাম!
​​​​
দশমুখো ওই ধনিক রাবণ
​​ ​​​​ দশ দিকে আছে মেলিয়া মুখ,
বিশ হাতে করে লুণ্ঠন তবু
​​ ​​​​ ভরে নাকো ওর ক্ষুধিত বুক।
হয়তো গোকুলে বাড়িছে সে আজ,
​​ ​​​​ উহারে কল্য বধিবে যে,
গোয়ালার গরে খেঁটে-লাঠি-করে
​​ ​​​​ হলধর-রূপী রাম সেজে!

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

এটাও দেখুন
Close
Back to top button