সম্প্রদান
বাজিল বেহেশতে বীণ আসিল সে শুভদিন
মুক্তি-নাট-নটবর সাজে বর-বেশে
সুন্দর সুন্দরতর হল আজ ধরা পর
সন্ধ্যারানি বধূবেশে নামিল গো হেসে।
হায় কে দেখেছে কবে দুই চাঁদ এক নভে,
সেহেলি সখীরা সবে মূক বাণীহারা,
কাহারে ছাড়িয়া কারে দেখিবে, বুঝিতে নারে,
স্তব্ধ অচপল-গতি তাই আঁখিতারা।
শাদির মহফিল মাঝে বসিয়া নওশার সাজে
নবিবর, আত্মীয় কুটুম্ব ঘিরি তারে,
চারিদিকে তারাদল, মাঝে চাঁদ ঝলমল,
হুরপরি লুকায় তা হেরি দিকপারে।
তালিব উঠিয়া কহে ‘লগ্ন যায় আর নহে,
বন্ধুগণ শুভকার্য হোক সমাপন!’
আনন্দের সে সভায় সকলে দানিল সায়
মজলিশে বসিল আসি কন্যাপক্ষগণ।
হেজাজি আচারমতো রেসম রেওয়াজ যত
হলে শেষ – খদিজার পিতৃব্য আসাদ
আহমদের কর ধরি দিল সমর্পণ করি
কন্যারে – সভায় ওঠে মোবারকবাদ!
কহিল আসাদ বীর করে মুছি অশ্রু-নীর,
‘হে সাদিক, হে আমিন, হেজাজের মণি,
পিতৃহীনা খদিজায় দিলাম তোমার পায়,
তোমারে জামাতা পেয়ে ভাগ্য বলে গণি।
হে নয়ন-অভিরাম! সার্থক তোমার নাম
রয় যেন চিরদিন পবিত্র হেজাজে,
চির-প্রেমাস্পদ হয়ে এ বধূ-রতনে লয়ে
আদর্শ দম্পতি হও আরবের মাঝে।’
‘তাই হোক, তাই হোক’ কহিল সভার লোক;
বর-বেশ-নবি সবে করিল সালাম।
নহবতে বাঁশি বাজে, হেথায় অন্দর মাঝে
নৃত্যগীত-স্রোত বয়ে চলে অবিরাম।
হুরিপরি নাচে গায় বেহেশ্তের জলসায়
আরশ আরাস্তা হল! – খোদার হবিব
হবিবায় পেল আজি, ভেরি তূরী ওঠে বাজি,
খুশির খবর বিশ্বে শোনায় নকিব।
বয়সের বন্ধনে কে বাঁধিবে যৌবনে,
য়ুসোফ বুঝিয়াছিল দেখে জুলেখায়,
চল্লিশ বছর তার বয়স হইল পার
তবু তারে দেখে জোহরা আকাশে পলায়।
সে কাহিনি নব-রূপে রূপ ধরি এল চুপে,
গোধূলি-বেলার রূপ দেখিবি কে আয়,
উদয়-উষাও আজ পলায় পাইয়া লাজ,
উঠিয়া ঈদের চাঁদ আবার লুকায়।
চল্লিশ বসন্ত দিন আছে এ মালায় লীন,
শুকায়নি আজও বঁধু পরেনিকো বলে,
প্রেমের শিশিরজলে ভিজায়ে অন্তরতলে
রেখেছিল জিয়াইয়ে – দিল আজি গলে।
উদয়-গোধূলি সাথে বিদায়-গোধূলি মাতে
হাতে হাত জড়াইয়া দাঁড়াইল নভে,
রবি শশী মনোদুখে ধরা দিল রাহুমুখে,
এত রূপ অপরূপ কে দেখেছে কবে।