বিখ্যাত কবিদের কবিতা

আল্লার রাহে ভিক্ষা দাও

মোর ​​ পরম-ভিক্ষু আল্লার নামে চাই
​​​​ ভিক্ষা দাও গো মাতা পিতা বোন ভাই,
​​ ​​ ​​ ​​​​ দাও ভিখারিরে ভিক্ষা দাও।
​​​​
মোর ​​​​ পরম-ডাকাত ঘরের দুয়ার খুলি ​​
​​​​ হরিয়া আমার সর্বস্ব সে ​​
​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ দিয়াছে ভিক্ষাঝুলি, ​​
​​​​ তাঁর মহাদান সেই ঝুলি কাঁধে তুলি ​​
​​ ​​ ​​ ​​​​ এসেছি ভিখারি,​​ হে ধনী,​​ ফিরিয়া চাও। ​​
​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ আল্লার নামে ভিক্ষা দাও।
​​ ​​ ​​​​
হে ধনিক,​​ তাঁর পাইয়াছ বহু দান, ​​
রত্ন মানিক ভোগ যশ সম্মান, ​​
তব প্রাসাদের চারিদিকে ভিখারিরা​​
প্রসাদ মেগেছে ক্ষুধার অন্ন,​​
​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ চায়নি তোমার হিরা। ​​
বলো,​​ বলো,​​ সেই নিরন্নদের মুখে ​​
অন্ন দিয়াছ?​​ কেঁদেছ তাদের দুখে?​​
লজ্জা ঢাকিয়া নগ্ন দেহের তার​​
মুক্তি,​​ পেয়েছে তোমার মুক্তি-হার?
​​​​
তব আত্মার আত্মীয় যারা, ​​
​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ তারা ক্ষুধা তৃষ্ণায় ​​
কাঙালের বেশে কাঁদে তব দরজায় – ​​
তাড়ায় তাদেরে গাল দিয়ে দরওয়ান, ​​
তুমিও মানুষ,​​ কাঁদে না তোমার প্রাণ?​​
হিরা মানিকের পাষাণ পরিয়া ​​
​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ তুমি কি পাষাণ হলে?​​
তোমার আত্মা কাঁদে না তোমার দুয়ারে​​
​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ মানুষ মলে?
পাওনি শান্তি,​​ আনন্দ প্রেম –
​​​​ জানি আমি তাহা জানি,
তোমার অর্থ ঢাকিয়া রেখেছে
​​​​ তোমার চোখের পানি!
কাঙালিনি মা-র বুকে ক্ষুধাতুর শিশু
তোমার দুয়ারে কাঁদে শোনো,​​ ওই শোনো।
ভিক্ষা দাও না,​​ রাশি রাশি হিরা মণি
​​​​ তুলে রাখো আর গোনো।
এ টাকা তোমার রবে না,​​ বন্ধু জানি,
এ লোভ তোমারে নরকে লইবে টানি।
‘আর্শ’ আসন টলিয়াছে আল্লার,
শুনি ক্ষুধিতের কাঙালের হাহাকার।
তাই সে পরম-ভিক্ষু ভিক্ষা চায়
ভিখারির মারফতে তব দরজায়।
ক্ষমা পাবে তুমি,​​ আজিও সময় আছে,
ভিক্ষা না দিলে পুড়িবে অগ্নি-আঁচে।
মৃত্যুর আর দেরি নাই তব –
​​​​ ফিরে চাও ফিরে চাও,
পরম-ভিক্ষু মোর আল্লার নামে –
​​​​ দরিদ্র উপবাসীরে ভিক্ষা দাও।
​​​​
ওগো জ্ঞানী,​​ ওগো শিল্পী,​​ লেখক,​​ কবি,
তোমরা দেখেছ ঊর্ধ্বের শশী রবি।
তোমরা তাঁহার সুন্দর সৃষ্টিরে
রেখেছ ধরিয়া রসায়িত মন ঘিরে।
তোমাদের এই জ্ঞানের প্রদীপ-মালা
করে নাকো কেন কাঙালের ঘর আলা?
এত জ্ঞান এত শক্তি,​​ বিলাস সে কি?
আলো তার দূর কুটিরে যায় না
​​​​ কোন সে শিলায় ঠেকি?
যাহারা বুদ্ধিজীবী,​​ সৈনিক
​​ ​​​​ হবে না তাহারা কভু,
তারা কল্যাণ আনেনি কখনও
​​ ​​​​ তারা বুদ্ধির প্রভু।
তাহাদের রস দেবার তরে কি
​​ ​​​​ লেখনী করিছ ক্ষয়?
শতকরা নিরানব্বই জন
​​ ​​​​ তারা তব কেহ নয়?
এই দরিদ্র ভিখারিরা আজ
​​ ​​​​ অসহায় গৃহহারা
‘আলো দাও’ বলে কাঁদিছে দুয়ারে –
​​ ​​​​ ভিক্ষা পাবে না তারা?
অজ্ঞান-তিমিরান্ধকারের
​​ ​​​​ ইহারা বদ্ধ জীব,
উৎপীড়কের পীড়নে পীড়িত
​​ ​​​​ দলিত বদ্‌-নসিব।
তোমাদের আছে বিপুল শক্তি,
​​ ​​​​ কৃপণ হইয়া তবে
কেন সহ মানুষের অপমান,
​​ ​​​​ মানুষ কি দাস রবে?
আমার পিছনে পীড়িত আত্মা
​​ ​​​​ অগণন জনগণ
অসহ জুলুম যন্ত্রণা পেয়ে
​​ ​​​​ করিতেছে ক্রন্দন।
পরম-ভিক্ষু আদেশ দিলেন,
​​ ​​​​ ভিক্ষা চাহিতে,​​ তাই
এই অগণন জনগণ তরে
​​ ​​​​ আসিয়াছি দ্বারে,​​ ভাই!
ভোলো ভয়,​​ দূর করো কৃপণতা,
​​ ​​​​ পাষাণে প্রাণ জাগাও,
ভিখারির ঝুলি পূর্ণ হইবে,
​​ ​​​​ তোমরা ভিক্ষা দাও।
​​​​
তোমরা কি দলপতি,
​​ ​​​​ তোমরা কি নেতা?
শুনেছি,​​ তোমরা কল্যাণকামী
​​ ​​​​ মহান উদারচেতা।
তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাহিব
​​ ​​​​ চরম আত্মদান,
চাহিব তোমার অভিনন্দন-মালা,
​​ ​​​​ যশ,খ্যাতি,​​ প্রাণ।
চাহিব তোমার গোপন ইচ্ছা
​​ ​​​​ আত্ম-প্রতিষ্ঠার,
চাহিব ভিক্ষা তোমার সর্ব
​​ ​​​​ লোভ ও অহংকার।
পরম ভিক্ষু পাঠায়েছে মোরে,
​​ ​​​​ দাও সে ভিক্ষা দাও।
আপনার সব লোভ ও তৃষ্ণা
​​ ​​​​ তাঁহারে বিলায়ে দাও!
তিনি নিরভাব,​​ পূর্ণ। ভিক্ষা
​​ ​​​​ চাহেন,​​ এ তাঁর সাধ,
শালুক ফুটায়ে যেমন তাহারই
​​ ​​​​ প্রেম-প্রীতি চায় চাঁদ।
যশ খ্যাতি আর অহংকারের
​​ ​​​​ লোভ তাঁরে দিলে ভিখ,
ফিরে পাবে তাঁর মহাদান,
​​ ​​​​ হবে মহানেতা নির্ভীক!
নিজেরা আত্মা ত্যাগ করে মহা
​​ ​​​​ ত্যাগের পথ দেখাও!
ভিক্ষা চাহে এ ভিখারি,​​ ভিক্ষা
​​ ​​​​ দাও গো ভিক্ষা দাও!
​​​​
তুমি কে?​​ তুমি মদোন্মত্ত
​​ ​​​​ মানবের যৌবন,
তুমি বারিদের ধারাজল,​​ মহা
​​ ​​​​ গিরির প্রস্রবণ।
তুমি প্রেম,​​ তুমি আনন্দ,​​ তুমি
​​ ​​​​ ছন্দ মূর্তিমান,
তুমিই পূর্ণ প্রাণের প্রকাশ,
​​ ​​​​ রুদ্রের অভিযান!
যুগে যুগে তুমিই অকল্যাণেরে
​​ ​​​​ করিয়াছ সংহার,
তুমিই বৈরাগী,​​ বক্ষের প্রিয়া
​​ ​​​​ ত্যজি ধরো তলোয়ার!
জরাজীর্ণের যুক্তি শোন না,
​​ ​​​​ গতি শুধু সম্মুখে,
মৃত্যুরে প্রিয় বন্ধুর সম
​​ ​​​​ জড়াইয়া ধরো বুকে।
তোমরাই বীর সন্তান,​​ যুগে
​​ ​​​​ যুগে এই পৃথিবীর,
হাসিয়া তোমরা ফুলের মতন
​​ ​​​​ লুটায়েছ নিজ শির।
দেহেরে ভেবেছ ঢেলার মতন,
​​ ​​​​ প্রাণ নিয়ে কর খেলা,
তোমারই রক্তে যুগে যুগে আসে
​​ ​​​​ অরুণ-উদয়-বেলা।
তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতে
​​ ​​​​ আঁখি ভরে উঠে জলে,
তোমরা যে পথে চল,​​ কেঁদে আমি
​​ ​​​​ লুটাই সে পথতলে।
তোমাদেরই প্রাণ ভিক্ষা চাহিতে
​​ ​​​​ এসেছি ভিখারি আমি,
ভিক্ষা চাহিতে পাঠাল সর্ব–
​​ ​​​​ জাতির পরম স্বামী।
তোমরা শহিদ,​​ তোমরা অমর,
​​ ​​​​ নিতি আনন্দধামে
তোমরা খেলিবে,​​ তোমাদের তরে
​​ ​​​​ তাঁর কৃপা নিতি নামে।
তোমরাই আশা-ভরসা জাতির
​​ ​​​​ স্বদেশের সেনাদল,
তোমরা চলিলে,​​ আনন্দে ধরা
​​ ​​​​ কেঁপে ওঠে টলমল।
তোমরা প্রবাহ,​​ তোমরা শক্তি,
​​ ​​​​ তোমরা জীবনধারা,
তোমাদেরই স্রোত যুগে যুগে ভাঙে
​​ ​​​​ সব বন্ধন-কারা।
তুষার হইয়া কেন আছ আজও,
​​ ​​​​ আগুন উঠেছে জ্বলে,
দিগ্‌দিগন্ত কাঁপাইয়া,​​ ছুটে
​​ ​​​​ এসো সবে দলে দলে।
তোমরা জাগিলে ঘুচে যাবে সব
​​ ​​​​ ক্লৈব্য ও অবসাদ,
পরম-ভিক্ষু এক আল্লার
​​ ​​​​ পুরিবে সেদিন সাধ।
আর কেহ ভিখ দিক বা না দিক
​​ ​​​​ তোমরা ভিক্ষা দাও,
সাম্য শান্তি আসিবে না যদি
​​ ​​​​ তোমরা ফিরে না চাও।
নহি নেতা,​​ রাজনৈতিক,​​ প্রেম-
​​ ​​​​ ভিক্ষা আমার নীতি।
পৃথিবী স্বর্গ,​​ পৃথিবীতে ফের
​​ ​​​​ জাগুক স্বর্গ-প্রীতি।
অসম্ভবেরে সম্ভব করা
​​ ​​​​ জাগো নবযৌবন।
ভিক্ষা দাও গো,​​ এ ধরা হউক
​​ ​​​​ আল্লার গুলশন।

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

এটাও দেখুন
Close
Back to top button