বিখ্যাত কবিদের কবিতা

তর্পণ

−​​ আজিও তেমনই করি
আষাঢ়ের মেঘ ঘনায়ে এসেছে
​​ ​​ ​​​​ ভারত-ভাগ্য ভরি।
আকাশ ভাঙিয়া তেমনই বাদল
​​ ​​ ​​​​ ঝরে সারা দিনমান,
দিন না ফুরাতে দিনের সূর্য
​​ ​​ ​​​​ মেঘে হল অবসান!
আকাশে খুঁজিছে বিজলি প্রদীপ,
​​ ​​ ​​​​ খোঁজে চিতা নদী-কূলে,
কার বয়নের মণি হরায়েছে
​​ ​​ ​​​​ হেথা অঞ্চল খুলে।
বজ্রে বজ্রে হাহাকার ওঠে,
​​ ​​ ​​​​ খেয়ে বিদ্যুৎ-কশা
স্বর্গে ছুটেছে সিন্ধু –
​​ ​​ ​​​​ ঐরাবত দীর্ঘশ্বসা।
ধরায় যে ছিল দেবতা,​​ তাহারে
​​ ​​ ​​​​ স্বর্গ করেছে চুরি;
অভিযানে চলে ধরণির সেনা,
​​ ​​ ​​​​ অশনিতে বাজে তূরী।
ধরণির শ্বাস ধূমায়িত হল
​​ ​​ ​​​​ পুঞ্জিত কালো মেঘে,
চিতাচুল্লিতে শোকের পাবক
​​ ​​ ​​​​ নিভে না বাতাস লেগে।
শ্মশানের চিতা যদি নেভে,​​ তবু
​​ ​​ ​​​​ জ্বলে স্মরণের চিতা,
এ-পারের প্রাণ-স্নেহরসে হল
​​ ​​ ​​​​ ও-পার দীপান্বিতা।
​​​​
​​ ​​ ​​​​ −​​ হতভাগ্যের জাতি,
উৎসব নাই,​​ শ্রাদ্ধ করিয়া
​​ ​​ ​​​​ কাটাই দিবস রাতি!
কেবলই বাদল,​​ চোখের বরষা,
​​ ​​ ​​​​ যদি বা বাদল থামে –
ওঠে না সূর্য আকাশে ভুলিয়া
​​ ​​ ​​​​ রামধনুও না নামে!
ত্রিশ জনে করে প্রায়শ্চিত্ত
​​ ​​ ​​​​ ত্রিশ কোটির সে পাপ,
স্বর্গ হইতে বর আনি,​​ আসে
​​ ​​ ​​​​ রসাতল হতে শাপ!
হে দেশবন্ধু,​​ হয়তো স্বর্গে
​​ ​​ ​​​​ দেবেন্দ্র হয়ে তুমি
জানি না কী চোখে দেখিছ
​​ ​​ ​​​​ পাপের ভীরুর ভারতভূমি!
মোদের ভাগ্যে ভাস্কর-সম
​​ ​​ ​​​​ উঠেছিলে তুমি তবু,
বাহির আঁধার ঘুচালে,
​​ ​​ ​​​​ ঘুচিল মনের তম কি কভু?
সূর্য-আলোকে মনের আঁধার
​​ ​​ ​​​​ ঘোচে না,​​ অশনি-ঘাতে
ঘুচাও ঘুচাও জাতের লজ্জা
​​ ​​ ​​​​ মরণ-চরণ-পাতে!
অমৃতে বাঁচাতে পারনি এ দেশ,
​​ ​​ ​​​​ ওগো মৃত্যুঞ্জয়,
স্বর্গ হইতে পাঠাও এবার
​​ ​​ ​​​​ মৃত্যুর বরাভয়!
ক্ষূণ শ্রদ্ধার শ্রাদ্ধ-বাসরে
​​ ​​ ​​​​ কী মন্ত্র উচ্চারি
তোমারে তুষিব,​​ আমরা তো নহি
​​ ​​ ​​​​ শ্রাদ্ধের অধিকারী!
শ্রদ্ধা দানিবে শ্রাদ্ধ করিবে
​​ ​​ ​​​​ বীর অনাগত তারা
স্বাধীন দেশের প্রভাত-সূর্যে
​​ ​​ ​​​​ বন্দিবে তোমা যারা!

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এটাও দেখুন
Close
Back to top button