বিখ্যাত কবিদের কবিতা

শরৎচন্দ্র

নব ঋত্বিক নবযুগের!
​​ ​​​​ নমস্কার! নমস্কার!
আলোকে তোমার পেনু আভাস
​​ ​​​​ নওরোজের নব উষার!
তুমি গো বেদনা-সুন্দরের
​​ ​​​​ দর্‌দ্-ই-দিল্,​​ নীল মানিক,
তোমার তিক্ত কণ্ঠে গো
​​ ​​​​ ধ্বনিল সাম বেদনা-ঋক।
​​​​
হে উদীচী উষা চির-রাতের,
​​ ​​​​ নরলোকের হে নারায়ণ!
মানুষ পারায়ে দেখিলে দিল্ –
​​ ​​​​ মন্দিরের দেব-আসন।
শিল্পী ও কবি আজ দেদার
​​ ​​​​ ফুলবনের গাইছে গান,
আশমানি-মউ স্বপনে গো
​​ ​​​​ সাথে তাদের করনি পান।
নিঙারিয়া ধুলা মাটির রস
​​ ​​​​ পিইলে শিব নীল আসব,
দুঃখ কাঁটায় ক্ষত হিয়ার
​​ ​​​​ তুমি তাপস শোনাও স্তব।
স্বর্গভ্রষ্ট প্রাণধারায়
​​ ​​​​ তব জটায় দিলে গো ঠাঁই,
মৃত সাগরের এই সে দেশ
​​ ​​​​ পেয়েছে প্রাণ আজিকে তাই।
পায়ে দলি পাপ সংস্কার
​​ ​​​​ খুলিলে বীর স্বর্গদ্বার,
শুনাইলে বাণী, ‘নহে মানব –
​​ ​​​​ গাহি গো গান মানবতার।
মনুষ্যত্ব পাপী তাপীর
​​ ​​​​ হয় না লয়,​​ রয় গোপন,
প্রেমের জাদু-স্পর্শে সে
​​ ​​​​ লভে অমর নব জীবন!’
নির্মমতায় নর-পশুর
​​ ​​​​ হায় গো যার চোখের জল
বুকে জমে হল হিম-পাষাণ,
​​ ​​​​ হল হৃদয় নীল গরল​​ ;
প্রখর তোমার তপ-প্রভায়
​​ ​​​​ বুকের হিম গিরি-তুষার –
গলিয়া নামিল প্রাণের ঢল,
​​ ​​​​ হল নিখিল মুক্ত-দ্বার।
শুভ্র হল গো পাপ-মলিন
​​ ​​​​ শুচি তোমার সমব্যথায়,
পাঁকের ঊর্ধ্বে ফুটিল ফুল
​​ ​​​​ শঙ্কাহীন নগ্নতায়!
​​​​
শাস্ত্র-শকুন নীতি-ন্যাকার
​​ ​​​​ রুচি-শিবার হট্টরোল
ভাগাড়ে শ্মশানে উঠিল ঘোর,
​​ ​​​​ কাঁদে সমাজ চর্মলোল!
ঊর্ধ্বে যতই কাদা ছিটায়
​​ ​​​​ হিংসুকের নোংরা কর
সে কাদা আসিয়া পড়ে সদাই
​​ ​​​​ তাদেরই হীন মুখের পর!
চাঁদে কলঙ্ক দেখে যারা
​​ ​​​​ জ্যোৎস্না তার দেখেনি,​​ হায়!
ক্ষমা করিয়াছ তুমি,​​ তাদের
​​ ​​​​ লজ্জাহীন বিজ্ঞতায়!
আজ যবে সেই পেচক-দল
​​ ​​​​ শুনি তোমার করে স্তব,
সেই তো তোমার শ্রেষ্ঠ জয়,
​​ ​​​​ নিন্দুকের শঙ্খ-রব!
ধর্মের নামে যুধিষ্ঠির
​​ ​​​​ ‘ইতি গজের’ করুক ভান!
সব্যসাচী গো,​​ ধরো ধনুক –
​​ ​​​​ হানো প্রখর অগ্নিবাণ!
‘পথের দাবি’র অসম্মান
​​ ​​​​ হে দুর্জয়,​​ করো গো ক্ষয়!
দেখাও স্বর্গ তব বিভায়
​​ ​​​​ এই ধুলার ঊর্ধ্বে নয়!
​​​​
দেখিছ কঠোর বর্তমান,
​​ ​​​​ নয় তোমার ভাব-বিলাস,
তুমি মানুষের বেদনা-ঘায়
​​ ​​​​ পাওনি গো ফুল-সুবাস।
তোমার সৃষ্টি মৃত্যুহীন
​​ ​​​​ নব ধরার জীবন-বেদ,
করনি মানুষে অবিশ্বাস
​​ ​​​​ দেখিয়া পাপ পঙ্ক ক্লেদ।
পুষ্পবিলাস নয় তোমার
​​ ​​​​ পাওনি তাই পুষ্প-হার,
বেদনা-আসনে বসায়ে আজ
​​ ​​​​ করে নিখিল পূজা তোমার!
অসীম আকাশে বাঁধনি ঘর
​​ ​​​​ হে ধরণির নীল দুলাল!
তব সাম-গান ধুলামাটির
​​ ​​​​ রবে অমর নিত্যকাল!
হয়তো আসিবে মহাপ্রলয়
​​ ​​​​ এ দুনিয়ার দুঃখ-দিন
সব যাবে শুধু রবে তোমার
​​ ​​​​ অশ্রুজল অন্তহীন।
অথবা যেদিন পূর্ণতায়
​​ ​​​​ সুন্দরের হবে বিকাশ,
সেদিনও কাঁদিয়া ফিরিবে এই
​​ ​​​​ তব দুখের দীর্ঘশ্বাস।
মানুষের কবি! যদি মাটির
​​ ​​​​ এই মানুষ বাঁচিয়া রয় –
রবে প্রিয় হয়ে হৃদি-ব্যাথায়,
​​ ​​​​ সর্বলোক গাহিবে জয়!

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button