বিখ্যাত কবিদের কবিতা

সিন্ধু (তৃতীয় তরঙ্গ)

হে ক্ষুধিত বন্ধু মোর,​​ তৃষিত জলধি,
এত জল বুকে তব,​​ তবু নাহি তৃষার অবধি!
​​​​ এত নদী উপনদী তব পদে করে আত্মদান,
​​ ​​ ​​​​ বুভুক্ষু! তবু কিতব ভরলি না প্রাণ?
​​ ​​ ​​​​ দুরন্ত গো,​​ মহাবাহু
​​ ওগো রাহু,
​​​​ তিন ভাগগ্রাসিয়াছ-এক ভাগ বাকী!
​​​​ সুরা নাই-পাত্র-হাতে কাঁপিতেছে সাকী!
​​​​
​​​​ হে দুর্গম! খোলো খোলো খোলো দ্বার।
সারি সারি গিরি-দরী দাঁড়ায়ে দুয়ারে করে প্রতীক্ষাতোমার।
​​​​ শস্য-শ্যামা বসুমতী ফুলে-ফলে ভরিয়া অঞ্জলি
​​ করিছে বন্দনা তব,​​ বলী!
​​​​ তুমি আছ নিয়া নিজ দুরন্ত কল্লোল
​​ আপনাতে আপনি বিভোল!
পাশে নাশ্রবণে তব ধরণীতে শত দুঃখ-গীত;
দেখিতেছ বর্তমান,​​ দেখেছ অতীত,
​​​​ দেখিবে সুদূর ভবিষ্যৎ-
মৃত্যুঞ্জয়ী দ্রষ্টা,​​ ঋষি,​​ উদাসীনবৎ!
ওঠে ভাঙে তব বুকে তরঙ্গেরমতো
জন্ম-মৃত্যু দুঃখ-সুখ,​​ ভূমানন্দে হেরিছ সতত!
হে পবিত্র! আজিও সুন্দর ধরা,​​ আজিও অম্লান
সদ্য-ফোটা পুষ্পসম,​​ তোমাতে করিয়ানিতি স্নান!
​​​​ জগতের যত পাপ গ্লানি
হে দরদী,​​ নিঃশেষে মুছিয়া লয় তবস্নেহ-পাণি!
​​​​ ধরা তব আদরিনী মেয়ে,
তাহারে দেখিতে তুমি আস’ মেঘ বেয়ে!
হেসে ওঠে তৃণে-শস্যে দুলালী তোমার,
কালো চোখ বেয়ে ঝরে হিম-কণাআনন্দাশ্রু-ভরা!
জলধারা হ’য়ে নামো,​​ দাও কত রঙিন যৌতুক,
ভাঙ’ গড়’ দোলাদাও,-
​​​​ কন্যারে লইয়া তব অনন্ত কৌতুক!
​​​​
​​​​ হে বিরাট,​​ নাহি তব ক্ষয়,
নিত্য নবনব দানে ক্ষয়েরে ক’রেছ তুমি জয়!
হে সুন্দর! জলবাহু দিয়া
​​​​ ধরণীর কটিতট আছো আঁকড়িয়া
ইন্দ্রানীলকান্তমণিমেখলার সম,
মেদিনীর নিতম্ব সাথে দোল’ অনুপম!
​​​​
​​​​ বন্ধু,​​ তব অনন্তযৌবন
​​​​ তরঙ্গে ফেনায়ে ওঠে সুরার মতন!
​​ ​​​​ কত মৎস্য-কুমারীরা নিত্য তোমা’ যাচে,
কত জল-দেবীদের শুষ্ক মালা প’ড়ে তব চরণের কাছে,
​​​​ চেয়ে নাহি দেখ,​​ উদাসীন!
কার যেন স্বপ্নে তুমি মত্ত নিশিদিন!
মন্থর-মন্দার দিয়া দস্যুসুরাসুর
মথিয়া লুন্ঠিয়া গেছে তব রত্ন-পুর,
হরিয়াছে উচ্চেঃশ্রবা,​​ তব লক্ষ্মী,​​ তব শশী-প্রিয়া
তার সব আছে আজ সুখে স্বর্গে গিয়া!
করেছে লুন্ঠন
তোমার অমৃত-সুধা-তোমার জীবন!
সব গেছে,​​ আছে শুধু ক্রন্দন-কল্লোল,
আছে জ্বালা,​​ আছেস্মৃতি,​​ ব্যথা-উতরোল
উর্ধ্বে শূন্য,​​ নিম্নে শূন্য,-শূন্য চারিধার,
মধ্যে কাঁদে বারিধার,​​ সীমাহীন রিক্ত হাহাকার!
​​​​
​​​​ হে মহান! হে চির-বিরহী!
হে সিন্ধু,​​ হে বন্ধু মোর,​​ হে মোরবিদ্রোহী,
সুন্দর আমার!
​​ ​​ ​​​​ নমস্কার!
নমস্কার লহ!
তুমি কাঁদ,-আমিকাঁদি,-কাঁদে মোর প্রিয়া অহরহ।
​​​​ হে দুস্তর,​​ আছে তব পার,​​ আছে কূল,
এ অনন্তবিরহের নাহি পার–নাহি কূল–শুধু স্বপ্ন,​​ ভুল।
​​​​
​​​​ মাগিব বিদায় যবে,​​ নাহি র’বআর,
তব কল্লোলের মাঝে বাজে যেন ক্রন্দন আমার!
​​​​ বৃথাই খুঁজিবে যবেপ্রিয়
উত্তরিও বন্ধু ওগো সিন্ধু মোর,​​ তুমি গরজিয়া!
​​​​
তুমি শূন্য,​​ আমি শূন্য,​​ শূন্য চারিধার,
মধ্যে কাঁদে বারিধার,​​ সীমাহীন রিক্ত হাহাকার।

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

এটাও দেখুন
Close
Back to top button