বিখ্যাত কবিদের কবিতা

সিন্ধু (দ্বিতীয় তরঙ্গ)

হে সিন্ধু,​​ হে বন্ধু মোর
হে মোর বিদ্রোহী!
​​​​ রহি’ রহি’
কোন্‌ বেদনায়
তরঙ্গ-বিভঙ্গে মাতো উদ্দাম লীলায়!
​​​​ হে উন্মত্ত,​​ কেন এ নর্তন?
নিষ্ফল আক্রোশে কেন কর আস্ফালন
​​​​ বেলাভূমে পড়োআছাড়িয়া!
সর্বগ্রাসী! গ্রাসিতেছ মৃত্যু-ক্ষুধা নিয়া
​​​​ ধরণীরেতিলে-তিলে!
হে অস্থির! স্থির নাহি হ’তে দিলে
​​​​ পৃথিবীরে! ওগোনৃত্য-ভোলা,
ধরারে দোলায় শূন্যে তোমার হিন্দোলা!
​​​​ হে চঞ্চল,
বারে বারে টানিতেছ দিগন্তিকা-বন্ধুর অঞ্চল!
কৌতুকী গো! তোমারএ-কৌতুকের অন্ত যেন নাই।-
​​​​ কী যেন বৃথাই
​​​​ খুঁজিতেছ কূলে কূলে
কারযেন পদরেখা!-কে নিশীথেএসেছিল ভুলে
​​​​ তব তীরে,​​ গর্বিতা সে নারী,
যতবারি আছে চোখে তব
​​​​ সব দিলে পদে তার ঢালি’,
​​​​ সে শুধু হাসিল উপক্ষায়!
তুমি গেলে করিতে চুম্বন,​​ সে ফিরালো কঙ্কণের ঘায়!
​​ –গেল চ’লেনারী!
সন্ধান করিয়া ফের,​​ হে সন্ধানী,​​ তারি
​​​​ দিকে দিকে তরণীর দুরাশালইয়া,
গর্জনে গর্জনে কাঁদ–“পিয়া,​​ মোর পিয়া!’’
​​​​
​​​​ বলো বন্ধু,​​ বুকে তব কেন এত বেগ,​​ এত জ্বালা?
​​​​ কে দিল না প্রতিদিন?​​ কে ছিঁড়িলমালা?
​​​​ কে সে গরবিনী বালা?​​ কার এত রূপ এত প্রাণ,
​​​​ হে সাগর,​​ করিল তোমারঅপমান!
​​​​ হে মজনু,​​ কোন্‌ সে লায়লীর
​​​​ প্রণয়ে উন্মাদতুমি?-বিরহ-অথির
​​​​ করিয়াছে বিদ্রোহ ঘোষণা,​​ সিন্ধুরাজ,
কোন্‌ রাজকুমারীরলাগি’?​​ কারে আজ
​​​​ পরাজিত করি’ রণে,​​ তব প্রিয়া রাজ-দুহিতারে
​​​​ আনিবে হরণকরি?-সারে সারে
​​​​ দলে দলে চলে তব তরঙ্গের সেনা,
​​​​ উষ্ণীষ তাদের শিরে শোভেশুভ্র ফেনা!
ঝটিকা তোমার সেনাপতি
আদেশ হানিয়া চলে উর্ধ্বেঅগ্রগতি।
উড়ে চলে মেঘের বেলুন,
‘মাইন্‌’ তোমার চোরা পর্বতনিপুণ!
হাঙ্গর কুম্ভীর তিমি চলে ‘সাবমেরিন’,
নৌ-সেনা চলিছে নীচেমীন!
সিন্ধু-ঘোটকেতে চড়ি’ চলিয়াছ বীর
​​​​ উদ্দাম অস্থির!
কখন আনিবে জয় করি’-কবে সে আসিবে তব প্রিয়া,
সেই আশা নিয়া
​​​​ মুক্তা-বুকে মালারচি’ নীচে!
তোমার হেরেম্‌-বাঁদী শত শুক্তি-বধূ অপেক্ষিছে।
​​​​ প্রবাল গাঁথিছে রক্ত-হার-
হে সিন্ধু,​​ হে বন্ধু মোর-তোমার প্রিয়ার!
​​​​ বধূ তবদীপাম্বীতা আসিবে কখন?
রচিতেছে নব নব দ্বীপ তারিপ্রমোদ-কানন।
​​​​ বক্ষে তব চলে সিন্ধু-পোত
ওরা তব যেন পোষাকপোতী-কপোত।
নাচায়ে আদর করে পাখীরে তোমার
ঢেউ-এর দোলায়,​​ ওগো কোমলদুর্বার!
​​​​ উচ্ছ্বাসে তোমার জল উলসিয়া উঠে,
​​​​ ও বুঝি চুম্বন তব তার চঞ্চুপুটে?
আশা তব ওড়ে লুব্ধ সাগর-শকুন,
তটভূমি টেনে চলে তবআশা-তারকার গুণ!
উড়ে যায় নাম-নাহি-জানা কত পাখী,
ও যেন স্বপন তব!-কী তুমি একাকী
ভাব কভু আনমনে যেন,
​​​​ সহসা লুকাতে চাও আপনারেকেন!
ফিরে চলো ভাঁটি-টানে কোন্‌ অন্তরালে,
যেন তুমি বেঁচে যাওনিজেরে লুকালে!-
​​​​ শ্রান্ত মাঝি গাহে গান ভাটিয়ালী সুরে,
ভেসে যেতেচায় প্রাণ দূরে-আরো দূরে।
​​​​ সীমাহীন নিরুদ্দেশ পথে,
মাঝি ভাসে,​​ তুমিভাস,​​ আমি ভাসি স্রোতে।
​​​​
নিরুদ্দেশ! শুনে কোন্‌ আড়ালীরডাক
ভাটিয়ালী পথে চলো একাকী নির্বাক?
​​​​ অন্তরের তলা হ’তে শোন কিআহবান?
কোন্‌ অন্তরিকা কাঁদে অন্তরালে থাকি’ যেন,
চাহে তবপ্রাণ!
বাহিরে না পেয়ে তারে ফের তুমি অন্তরেরপানে
​​​​
​​​​ লজ্জায়-ব্যথায়-অপমানে!
​​ ​​ ​​​​ তারপর,​​ বিরাট পুরুষ! বোঝা নিজভুল
​​ ​​ ​​​​ জোয়ারে উচ্ছ্বসি’ ওঠো,​​ ভেঙে চল কূল
​​​​ দিকে দিকে প্লাবনের বাজায়েবিষাণ
বলো, ‘​​ প্রেম করে না দুর্বল ওরে করে মহীয়ান্‌!’
বারণী সাকীরে কহ, ‘​​ আনো সখি সুরার পেয়ালা!’
আনন্দে নাচিয়া ওঠো দুখের নেশায় বীর,​​ ভোল সবজ্বালা!
​​​​ অন্তরের নিষ্পেষিত ব্যথার ক্রন্দন
​​​​ ফেনা হ’য়ে ওঠে মুখে বিষরমতন।
হে শিব,​​ পাগল!
তব কন্ঠে ধরি’ রাখো সেই জ্বালা-সেই হলাহল!
হে বন্ধু,​​ হে সখা,
এতদিনে দেখা হল,​​ মোরা দুই বন্ধু পলাতকা।
​​​​
কত কথা আছে-কত গান আছে শোনাবার,
কত ব্যথা জানাবার আছে-সিন্ধু,​​ বন্ধু গোআমার!
​​​​ এসো বন্ধু,​​ মুখোমুখি বসি,
অথবা টানিয়া লহ তরঙ্গের আলিঙ্গন দিয়া,​​ দুঁহু পশি
​​​​ ঢেউ নাই যেথা-শুধু নিতল সুনীল!-
​​ ​​ ​​​​ তিমির কহিয়া দাও-সে যেন খোলে নাখিল
​​​​ থাকে দ্বারে বসি’,
সেইখানে ক’ব কথা। যেন রবি-শশী
​​​​ নাহি পশেসেথা।
তুমি র’বে-আমি র’ব-আর র’বে ব্যথা!
সেথা শুধু ডুবে র’বে কথা নাহিকহি’,-
​​​​ যদি কই,-
​​ ​​ ​​​​ নাই সেথা দু’টি কথা বই,
আমিও বিরহী,​​ বন্ধু,​​ তুমিও বিরহী!’

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button