বিখ্যাত কবিদের কবিতা

আড়াল

আমি কি আড়াল করিয়া রেখেছি তব বন্ধুর মুখ?
না জানিয়া আমি না জানি কতই দিয়াছি তোমায় দুখ।
​​ ​​ ​​​​ তোমার কাননে দখিনা পবন
​​ ​​ ​​​​ এনেছিল ফুল পূজা-আয়োজন,
আমি এনু ঝড় বিধাতার ভুল – ভণ্ডুল করি সব,
আমার অশ্রু-মেঘে ভেসে গেল তব ফুল-উৎসব।
​​​​
মম উৎপাতে ছিঁড়েছে কি প্রিয়,​​ বক্ষের মণিহার?
আমি কি এসেছি তব মন্দিরে দস্যু ভাঙিয়া দ্বার?
​​ ​​ ​​​​ আমি কি তোমার দেবতা-পূজার
​​ ​​ ​​​​ ছড়ায়ে ফেলেছি ফুল-সম্ভার?
আমি কি তোমার স্বর্গে এসেছি মর্ত্যের অভিশাপ
আমি কি তোমার চন্দ্রের বুকে কালো কলঙ্ক-ছাপ?
​​​​
ভুল করে যদি এসে থাকি ঝড়,​​ ছিঁড়িয়া থাকি মুকুল,
আমার বরষা ফুটায়েছে অনেক অধিক ফুল!
​​ ​​ ​​​​ পরায়ে কাজল ঘন বেদনার
​​ ​​ ​​​​ ডাগর করেছি নয়ন তোমার,
কূলের আশায়,​​ ভাঙিয়া করেছি সাত সাগরের রানি,
সে দিয়াছে মালা,​​ আমি সাজায়েছি নিখিল সুষমা-ছানি।
দস্যুর মতো হয়তো খুলেছি লাজ-অবগুণ্ঠন,
তব তরে আমি দস্যু,​​ করেছি ত্রিভুবন লুণ্ঠন!
​​ ​​ ​​​​ তুমি তো জান না,​​ নিখিল বিশ্ব
​​ ​​ ​​​​ কার প্রিয়া লাগি আজিকে নিঃস্ব?
কার বনে ফুল ফোটাবার লাগি ঢালিয়াছি এত নীর,
কার রাঙা পায়ে সাগর বাঁধিয়া করিয়াছি মঞ্জীর।
​​​​
তুমি না চাহিতে আসিয়াছি আমি – সত্য কি এইটুক?
ফুল ফোটা-শেষে ঝরিবার লাগি ছিলে না কি উৎসুক?
​​ ​​ ​​​​ নির্মম-প্রিয়-নিষ্ঠুর হাতে
​​ ​​ ​​​​ মরিতে চাহনি আঘাতে আঘাতে?
মরিতে চাহনি আঘাতে আঘাতে?
তুমি কি চাহনি কেহ এসে তব ছিঁড়ে দেয় গাঁথা-মালা?
​​​​
পাষাণের মতো চাপিয়া থাকিনি তোমার উৎস-মুখে,
আমি শুধু এসে মুক্তি দিয়াছি আঘাত হানিয়া বুকে!
​​ ​​ ​​​​ তোমার স্রোতেরে মুক্তি দানিয়া
​​ ​​ ​​​​ স্রোতমুখে আমি গেলাম ভাসিয়া।
রহিবার যে – সে রয়ে গেল কূলে,​​ সে রচুক সেথা নীড়!
মম অপরাধে তব স্রোত হল পুণ্য তীর্থ-নীর!
​​​​
রূপের দেশের স্বপন-কুমার স্বপনে আসিয়াছিনু,
বন্দিনী! মম সোনার ছোঁয়ায় তব ঘুম ভাঙাইনু।
​​ ​​ ​​​​ দেখ মোরে পাছে ঘুম ভাঙিয়াই,
​​ ​​ ​​​​ ঘুম না টুটিতে তাই চলে যাই,
যে আসিল তব জাগরণ-শেষে মালা দাও তারই গলে,
সে থাকুক তব বক্ষে – রহিব আমি অন্তর-তলে।
​​​​
সন্ধ্যা-প্রদীপ জ্বালায়ে যখন দাঁড়াবে আঙিনা-মাঝে,
শুনিয়ো কোথায় কোন তারা-লোকে কার ক্রন্দন বাজে!
​​ ​​ ​​​​ আমার তারার মলিন আলোকে
​​ ​​ ​​​​ ম্লান হয়ে যাবে দীপশিখা চোখে,
হয়তো অদূর গাহিবে পথিক আমারই রচিত গীত –
যে গান গাইয়া অভিমান তব ভাঙাতাম সাঁঝে নিতি।
​​​​
গোধূলি-বেলায় ফুটিবে উঠানে সন্ধ্যামণির ফুল,
তুলসী-তলায় করিতে প্রণাম খুলে যাবে বাঁধা চুল।
​​ ​​ ​​​​ কুন্তল-মেঘ-ফাঁকে অবিরল
​​ ​​ ​​​​ অকারণে চোখে ঝরিবে গো জল,
সারা শর্বরী বাতায়নে বসি নয়ন-প্রদীপ জ্বালি
খুঁজিবে আকাশে কোন তারা কাঁপে তোমারে চাহিয়া খালি।
​​​​
নিষ্ঠুর আমি – আমি অভিশাপ,​​ ভুলিতে দিব না,​​ তাই
নিশ্বাস মম তোমারে ঘিরিয়া শ্বসিবে সর্বদাই।
​​ ​​ ​​​​ তোমারে চাহিয়া রচিনু যে গান
​​ ​​ ​​​​ কণ্ঠে কণ্ঠে লভিবে তা প্রাণ,
আমার কণ্ঠে হইবে নীরব,​​ নিখিল-কণ্ঠ-মাঝে
শুনিবে আমারই সেই ক্রন্দন সে গান প্রভাতে সাঁঝে!

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

এটাও দেখুন
Close
Back to top button