বিখ্যাত কবিদের কবিতা

সাজিয়াছি বর মৃত্যুর উৎসবে

দেখা দিলে রাঙা মৃত্যুর রূপে এতদিনের কি গো রানি?
মিলন-গোধূলি-লগনে শুনালে চির-বিদায়ের বাণী।
​​​​ যে ধূলিতে ফুল ঝরায় পবন
​​​​ রচিলে সেথায় বাসর-শয়ন,
বারেক কপোলে রাখিয়া কপোল,​​ ললাটে কাঁকন হানি,
দিলে মোর পরে সকরুণ করে কৃষ্ণ কাফন টানি।
​​​​
নিশি না পোহাতে জাগায়ে বলিলে, ‘হল যে বিদায় বেলা।”
তব ইঙ্গিতে ও-পার হইতে এপারে আসিল ভেলা।
​​​​ আপনি সাজালে বিদায়ের বেশে
​​​​ আঁখি-জল মম মুছাইলে হেসে,
বলিলে, ‘অনেক হইয়াছে দেরি,​​ আর জমিবে না খেলা!
সকলের বুকে পেয়েছ আদর,​​ আমি দিনু অবহেলা।‘
​​​​
‘চোখ গেল উহু চোখ গেল’বলে কাঁদিয়া উঠিল পাখি,
হাসিয়া বলিলে, ‘বন্ধু,​​ সত্যি চোখ গেল ওর নাকি?’
​​​​ অকূল অশ্রু-সাগর-বেলায়
​​​​ শুধু বালু নিয়ে যে-জন খেলায়,
কী বলিব তারে,​​ বিদায়-ক্ষণেও ভিজিল না যার আঁখি!
শ্বসিয়া উঠিল নিশীথ-সমীর, ‘চোখ গেল’কাঁদে পাখি!
দেখিনু চাহিয়া ও-মুখের পানে – নিরশ্রু নিষ্ঠুর!
বুকে চেপে কাঁদি,​​ প্রিয় ওগো প্রিয়,​​ কোথা তুমি কত দূর?
​​​​ এত কাছে তুমি গলা জড়াইয়া
​​​​ কেন হুহু করে ওঠে তবু হিয়া,
কী যেন কী কীসের অভাব এ বুকে ব্যথা-বিধুর!
চোখ-ভরা জল,​​ বুক-ভরা কথা,​​ কণ্ঠে আসে না সুর।
​​​​
হেনার মতন বক্ষে পিষিয়া করিনু তোমারে লাল,
ঢলিয়া পড়িলে দলিত কমল জড়ায়ে বাহু-মৃণাল!
​​​​ কেঁদে বলি, ‘প্রিয়া,​​ চোখে কই জল?
​​​​ হল না তো ম্লান চোখের কাজল!’
চোখের জল নাই – উঠিল রক্ত – সুন্দর কঙ্কাল!
বলিলে, ‘বন্ধু,​​ চোখেরই তো জল,​​ সে কি রহে চিরকাল?’
​​​​
ছল ছল ছল কেঁদে চলে জল,​​ ভাঁটি-টানে ছুটে তরি,
সাপিনির মতো জড়াইয়া ধরে শশীহীন শর্বরী।
​​​​ কূলে কূলে ডাকে কে যেন, ‘পথিক,
​​​​ আজও রাঙা হয়ে ওঠেনি তো দিক!
অভিমানী মোর! এখনই ছিঁড়িবে বাঁধন কেমন করি?
চোখে নাই জল – বক্ষের মোর ব্যথা তো যায়নি মরি!’
​​​​
কেমনে বুঝাই কী যে আমি চাই,​​ চির-জনমের প্রিয়া!
কেমনে বুঝাই – এত হাসি গাই তবু কাঁদে কেন হিয়া!
​​​​ আছে তব বুকে করুণার ঠাঁই,
​​​​ স্বর্গের দেবী – চোখে জল নাই!
কত জীবনের অভিশাপ এ যে,​​ কতবার জনমিয়া –
পারিজাত-মালা ছুঁইতে শুকালে – হারাইলে দেখা দিয়া।
​​​​
ব্যর্থ মোদের গোধূলি-লগন এই সে জনমে নহে,
বাসর-শয়নে হারায়ে তোমায় পেয়েছি চির-বিরহে!
​​​​ কত সে লোকের কত নদনদী
​​​​ পারায়ে চলেছি মোরা নিরবধি,
মোদের মাঝারে শত জনমের শত সে জলধি বহে।
বারেবারে ডুবি বারেবারে উঠি জন্ম-মৃত্যু-দহে!
​​​​
বারে বারে মোরা পাষাণ হইয়া আপনারে থাকি ভুলি,
ক্ষণেকের তরে আসে কবে ঝড়,​​ বন্ধন যায় খুলি।
​​​​ সহসা সে কোন সন্ধ্যায়,​​ রানি,
​​​​ চকিতে হয় গো চির-জানাজানি!
মনে পড়ে যায় অভিশাপ-বাণী,​​ উড়ে যায় বুলবুলি।
কেঁদে কও, ‘প্রিয়,​​ হেথা নয়,​​ হেথা লাগিয়াছে বহু ধূলি।’
​​​​
মুছি পথধূলি বুকে লবে তুলি মরণের পারে কবে,
সেই আশে,​​ প্রিয়,​​ সাজিয়াছি বর মৃত্যুর উৎসবে!
​​​​ কে জানিত হায় মরমের মাঝে
​​​​ এমন বিয়ের নহবত বাজে!
নবজীবনের বাসর-দুয়ারে কবে ‘প্রিয়া’‘বধূ’হবে –
সেই সুখে,​​ প্রিয়া,​​ সাজিয়াছি বর মৃত্যুর উৎসবে!

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

এটাও দেখুন
Close
Back to top button