বিখ্যাত কবিদের কবিতা

ভীরু


​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন চাহ নাকো ফিরে।
গৃহকোণ ছাড়ি আসিয়াছ আজ দেবতার মন্দিরে।
​​ ​​ ​​​​ পুতুল লইয়া কাটিয়াছে বেলা
​​ ​​ ​​​​ আপনারে লয়ে শুধু হেলা-ফেলা,
জানিতে না,​​ আজ হৃদয়ের খেলা আকুল নয়ন-নীরে,
এত বড়ো দায় নয়নে নয়নে নিমেষের চাওয়া কি রে?
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন চাহ নাকো ফিরে॥
​​​​

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন চাহ নাকো ফিরে।
জানিতে না আখিঁ আঁখিতে হারায় ডুবে যায় বাণী ধীরে।
​​ ​​ ​​​​ তুমি ছাড়া আর ছিল নাকো কেহ
​​ ​​ ​​​​ ছিল না বাহির ছিল শুধু গেহ,
কাজল ছিল গো জল ছিল না,​​ ও উজল আঁখির তীরে।
সেদিনও চলিতে ছলনা বাজেনি ও-চরণ-মঞ্জীরে!
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন চাহ নাকো ফিরে।॥
​​​​

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন চাহ নাকো ফিরে।
সেদিনও তোমার বনপথে যেতে পায়ে জড়াত না লতা।
​​ ​​ ​​​​ সেদিনও বেভুল তুলিয়াছ ফুল
​​ ​​ ​​​​ ফুল বিঁধিতে গো,​​ বিঁধেনি আঙুল,
মালার সাথে যে হৃদয়ও শুকায়,​​ জানিতে না সে বারতা।
জানিতে না,​​ কাঁদে মুখর মুখের আড়ালে নিঃসঙ্গতা
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন কহ নাকো কথা॥

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তব কপটতা,​​ চতুরালি!
তুমি জানিতে না,​​ ও কপোলে থাকে ডালিম দানার লালি!
​​ ​​ ​​​​ জানিতে না ভীরু রমণীর মন
​​ ​​ ​​​​ মধুকর-ভারে লতার মতন
কেঁপে মরে কথা কন্ঠে জড়ায়ে নিষেধ করে গো খালি।
আঁখি যত চায় তত লজ্জায় লজ্জা পাড়ে গো গালি!
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তব কপটতা,​​ চতুরালি!
​​​​

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি,​​ ভীরু! কীসের এ বিস্ময়।
জানিতে না কভু নিজেরে হেরিয়া নিজেরই করে যে ভয়।
​​ ​​ ​​​​ পুরুষ পুরুষ–শুনেছিলে নাম,
​​ ​​ ​​​​ দেখেছ পাথর করনি প্রণাম,
প্রণাম করেছ লুব্ধ দু-কর চেয়েছে চরণ ছোঁয়।
জানিতে না,​​ হিয়া পাথর পরশি পরশ-পাথরও হয়!
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি,​​ ভীরু,​​ কীসের এ বিষ্ময়॥
​​​​

​​​​
​​ ​​ ​​​​ কীসের তোমার শঙ্কা এ,​​ আমি জানি।
পরাণের ক্ষুধা দেহের দু-তীরে করিতেছে কানাকানি।
​​ ​​ ​​​​ বিকচ বুকের বকুল-গন্ধ
​​ ​​ ​​​​ পাপড়ি রাখিতে পারে না বন্ধ,
যত আপনারে লুকাইতে চাও তত হয় জানাজানি।
অপাঙ্গে আজ ভিড় করেছে গো লুকানো যতেক বাণী।
​​ ​​ ​​​​ কীসের তোমার শঙ্কা এ,​​ আমি জানি॥

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি,​​ কেন বলিতে পার না খুলি।
গোপনে তোমায় আবেদন তার জানায়েছে বুলবুলি।
​​ ​​ ​​​​ যে-কথা শুনিতে মনে ছিল সাধ
​​ ​​ ​​​​ কেমনে সে পেল তারই সংবাদ?
সেই কথা বঁধু তেমনই করিয়া বলিল নয়ন তুলি।
কে জানিত এত জাদু-মাখা তার ও কঠিন অঙ্গুলি।
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি কেন বলিতে পার না খুলি॥
​​​​

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি কেন যে নিরাভরণা,
ব্যাথার পরশে হয়েছে তোমরা সকল অঙ্গ সোনা।
​​ ​​ ​​​​ মাটির দেবীরে পরায় ভূষণ,
​​ ​​ ​​​​ সোনার সোনায় কীবা প্রয়োজন?
দেহ-কূল ছাড়ি নেমেছে মনের অকূল নিরঞ্জনা।
বেদনা আজিকে রূপেরে তোমার করিতেছে বন্দনা।
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি তুমি কেন যে নিরাভরণা॥
​​​​

​​​​
​​ ​​ ​​​​ আমি জানি,​​ ওরা বুঝিতে পারে না তোরে।
নিশীথে ঘুমালে কুমারী বালিকা,​​ বধূ জাগিয়াছে ভোরে!
​​ ​​ ​​​​ ওরা সাঁতরিয়া ফিরিতেছে ফেনা,
​​ ​​ ​​​​ শুক্তি যে ডোব – বুঝিতে পারে না!
মুক্তা ফলেছে – আঁখির ঝিনুক ডুবেছে আঁখির লোরে।
বোঝা কত ভার হলে – হৃদয়ের ভরাডুবি হয়,​​ ওরে,
​​ ​​ ​​​​ অভাগিনি নারী,​​ বুঝাবি কেমন করে॥
কৃষ্ণনগর
৩২ শ্রাবণ, ১৩৩৪

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

Back to top button