বিখ্যাত কবিদের কবিতা

এ মোর অহংকার

নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার,
তোমায় আমি করব সৃজন,​​ এ মোর অহংকার!
​​ ​​ ​​​​ এমনই চোখের দৃষ্টি দিয়া
​​ ​​ ​​​​ তোমায় যারা দেখল প্রিয়া,
তাদের কাছে তুমি তুমিই। আমার স্বপনে
তুমি নিখিল রূপের রানি মানস-আসনে! –
​​​​
সবাই যখন তোমায় ঘিরে করবে কলরব,
আমি দূরে ধেয়ান-লোকে রচব তোমার স্তব।
​​ ​​ ​​​​ রচব সুরধুনী-তীরে
​​ ​​ ​​​​ আমার সুরের উর্বশীরে,
নিখিল কণ্ঠে দুলবে তুমি গানের কন্ঠ-হার –
কবির প্রিয়া অশ্রুমতী গভীর বেদনার!
​​​​
যেদিন আমি থাকব নাকো,​​ থাকবে আমার গান,
বলবে সবাই, “কে সে কবির কাঁদিয়েছিল প্রাণ?”
​​ ​​ ​​​​ আকাশ-ভরা হাজার তারা
​​ ​​ ​​​​ রইবে চেয়ে তন্দ্রাহারা,
সখার সাথে জাগবে রাতে,​​ চাইবে আকাশে,
আমার গানে পড়বে মনে আমায় আভাসে!
​​​​
বুকের তলা করবে ব্যথা,​​ বলবে কাঁদিয়া,
“বন্ধু! সে কে তোমার গানের মানসী প্রিয়া?”
​​ ​​ ​​​​ হাসবে সবাই,​​ গাইবে গীতি,–
​​ ​​ ​​​​ তুমি নয়ন-জলে তিতি
নতুন করে আমার গানে আমার কবিতায়
গহিন নিরালাতে বসে খুঁজবে আপনায়!
রাখতে যেদিন নারবে ধরা তোমায় ধরিয়া,
ওরা সবাই ভুলবে তোমায় দুদিন স্মরিয়া,
​​ ​​ ​​​​ আমার গানের অশ্রুজলে
​​ ​​ ​​​​ আমার বাণীর পদ্মদলে
দুলবে তুমি চিরন্তনী চির-নবীনা!
রইবে শুধু বাণী,​​ সেদিন রইবে নাকো বীণা!
​​​​
তৃষ্ণা-‘ফোরাত’-কূলে কবে ‘সাকিনা’১ -সমা
এক লহমার হলে বধূ,​​ হায় মনোরমা!
​​ ​​ ​​​​ মুহূর্ত সে কালের রেখা
​​ ​​ ​​​​ আমার গানে রইল লেখা
চিরকালের তরে প্রিয়! মোর সে শুভক্ষণ
মরণ-পারে দিল আমায় অনন্ত জীবন।
​​​​
নাই বা পেলাম কণ্ঠে আমার তোমার কণ্ঠহার,
তোমায় আমি করব সৃজন এ মোর অহংকার!
​​ ​​ ​​​​ এই তো আমার চোখের জলে,
​​ ​​ ​​​​ আমার গানে সুরের ছলে,
কাব্যে আমার,​​ আমার ভাষায়,​​ আমার বেদনায়,
নিত্যকালের প্রিয়া আমায় ডাকছ ইশারায়!…
চাই না তোমায় স্বর্গে নিতে,​​ চাই না এ ধুলাতে
তোমার পায়ে স্বর্গ এনে ভুবন ভুলাতে!
​​ ​​ ​​​​ ঊর্ধ্বে তোমার – তুমি দেবী,
​​ ​​ ​​​​ কি হবে মোর সে-রূপ সেবি!
চাই না দেবীর দয়া,​​ যাচি প্রিয়ার আঁখিজল,
একটু দুঃখে অভিমানে নয়ন টলমল!
​​​​
যেমন করে খেলতে তুমি কিশোর বয়সে –
মাটির মেয়ের দিতে বিয়ে মনের হরষে,
​​ ​​ ​​​​ বালু দিয়ে গড়তে গেহ,
​​ ​​ ​​​​ জাগত বুকে মাটির স্নেহ,
ছিল না তো স্বর্গ তখন সূর্য তারা চাঁদ,
তেমনি করে খেলবে আবার পাতবে মায়া-ফাঁদ!
​​​​
মাটির প্রদীপ জ্বালবে তুমি মাটির কুটিরে,
খুশির রঙে করবে সোনা ধূলি-মুঠিরে।
​​ ​​ ​​​​ আধখানা চাঁদ আকাশ পরে
​​ ​​ ​​​​ উঠবে যবে গরব-ভরে
তুমি বাকি আধখানা হাসবে ধরাতে,
তড়িৎ ছিঁড়ে পড়বে তোমার খোঁপায় জড়াতে!
তুমি আমার বকুল যূথী – মাটির তারা-ফুল
ঈদের প্রথম চাঁদ গো তোমার কানের পারসি দুল!
​​ ​​ ​​​​ কুসমি-রাঙা শাড়িখানি
​​ ​​ ​​​​ চৈতি সাঁঝে পড়বে রানি,
আকাশ-গাঙে জাগবে জোয়ার রঙের রাঙা বান,
তোরণ-দ্বারে বাজবে করুণ বারোয়াঁ মুলতান।
​​​​
আমার-রচা গানে তোমায় সেই বেলাশেষে
এমনই সুরে চাইবে কেহ পরদেশি এসে!
​​ ​​ ​​​​ রঙিন সাঁঝে ওই আঙিনায়
​​ ​​ ​​​​ চাইবে যারা,​​ তাদের চাওয়ায়
আমার চাওয়া রইবে গোপন! – এ মোর অভিমান,
যাচবে যারা তোমায়,​​ রচি তাদের তরে গান!
​​​​
নাই বা দিল ধরা আমায় ধরার আঙিনায়,
তোমায় জিনে গেলাম সুরের স্বয়ংবর-সভায়!
​​ ​​ ​​​​ তোমার রূপে আমার ভুবন
​​ ​​ ​​​​ আলোয় আলোয় হল মগন,
কাজ কি জেনে কাহার আশায় গাঁথছ ফুল-হার
আমি তোমায় গাঁথছি মালা এ মোর অহংকার!
কৃষ্ণনগর
২৬ চৈত্র, ১৩৩৪

কবির আরো কবিতা পড়ুন

Leave a Reply

Back to top button